লিভার ভালো রাখার উপায়
লিভার ভালো রাখার উপায়
হ্যালো এভরিওয়ান, আমাদের আজকের আর্টিকেলটি হচ্ছে লিভার ভালো রাখার উপায় নিয়ে।আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য অনেক বেশি উপকারের হবে।
লিভার ভালো রাখার উপায় |
আমরা অনেকে জানে না লিভার ভালো রাখার উপায়। যারা লিভার ভালো রাখার উভয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাদের জন্য আটকে আর্টিকেলটি আমাদের।
আমাদের শরীরে লিভার হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। সুস্থ রাখার জন্য নিজেকে লিভারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অধিকাংশই ক্ষেত্রে লিভার খারাপ হয়ে যাবার মূল কারণটা হচ্ছে কিছু বদ অভ্যাসের কারণে। লিভার ভালো রাখার উপায় কি নিচে লিভার ভালো রাখার ১০ টি উপায় দেওয়া হল।
১) লো-ফ্যাট ফুডে না।
ফ্যাটি লিভারের সমস্যাটি দূর করার জন্য আপনাকে সব সময় এড়িয়ে চলতে হবে অতিরিক্ত মদ্যপান,তেল-মশলামুক্ত খাবার।তবে লো-ফ্যাট ফুড হতে সাবধান। সুপার মার্কেটে গিয়ে লো ফ্যাট বা ৯৯ শতাংশ লোয়ার ইন ফ্যাট লেখা ফুড কেনা অবিলম্বে ত্যাগ করুন। ফ্যাট বাদ দেওয়া হয় যদিও এসব খাবার থেকে কিন্তু স্বাদ ধরে রাখার জন্য যোগ করা হয় বেশি পরিমাণ চিনি।যাতে করে লিভারের সমস্যা আরো বেড়ে যায়।
২) স্ট্রেস থাকলে খাবেন না।
বোর হলে এনার্জি কম লাগলে আমরা কি করে থাকি? বিশেষ করে অনেকে এই সময়ে খাবার খেয়ে মুড ঠিক করে ফেলতে চান। চিকিৎসকগণেরা বলেছেন লিভার সুস্থ রাখতে স্ট্রেসের সময় খাবার খাবেন না বা ছৌঁবেন না।এই সময়ে কিন্তু আমাদের শরীর স্বাস্থ্যে হজম ঠিক মতো হয় না। তাই লিভার ভালো রাখতে এই সময়টিতে নিজেকে কন্ট্রোল করবেন।
৩) হার্বাল কেয়ার।
আপনাদের কাছে যদিও ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগে তবুও কিন্তু ব্যাপারটি সত্য। বেশ কিছু গাছের মূল রয়েছে যে গাছের মূলগুলো আমাদের লিভারকে ভালো রাখতে অনেক বেশি সহয়তা করেন।যেমন,ড্যানডেলিওন,মিল্ক থিসল,বা হলুদের মূল এরা কিন্তু লিভারের স্বাস্থ্য এবং ভালো রাখতে অনেক বেশি সাহায্য করে। লিভার ভালো ও সুস্থ রাখতে আপনি খেতে পারেন এই গাছের মূল গুলো।
৪) সাপ্লিমেন্ট।
আপনি যখন প্রোটিন ভিটামিন বা সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার সময় সতর্ক থাকবেন। এমন কিছু সাপ্লিমেন্ট বাছুন বা লিভার ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে আপনার লিভার পরিষ্কার করে ভিটামিন বি কমপ্লিমেন্ট এবং ভিটামিন সি। প্রোটিনের মধ্যে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিডও লিভার পরিষ্কার রাখার জন্য অনেক ভালো। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড লিভার সুস্থ রাখতে বেশ ভালো সাহায্য করে।
৫) ওষুধ থেকে সাবধান।
বেশ কিছু ওষুধ রয়েছেন যে ওষুধগুলো লিভারের জন্য ক্ষতিকর। সেইসব ওষুধ থেকে সব সময় নিজেকে দূরে রাখবেন। কিছু পেনকিলার,যেমন টাইলেনল বা কোলেস্টেরলের ওষুধ লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। তাই লিভার ভালো রাখতে সব সময় এসব ওষুধ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন।
৬) কফি।
চা,কফি খেলে শরীরের ক্ষতি হয় এই কথাটা অনেকবার শুনেছি। কফি খাওয়ার কিন্তু অনেক সুফল রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন নিয়মিত কফি খেলে লিভারের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্তত ১৪ শতাংশ কমে যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই কফি খেতে হবে দুধ ও চিনি ছাড়া। আপনি যদি পরিমাণ মতো কফি খান আপনাকে লিভারের সমস্যা থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে।
৭) প্লান্ট প্রোটিন।
আপনার শরীরের লিভার ঠিক রাখার জন্য সবচেয়ে সঠিক খাবারটি হচ্ছে বাছা।অ্যানিমাল প্রোটিনের থেকে লিভারের জন্য বেশি ভালো প্লান্ট প্রোটিন।তাই আপনি লিভার ভালো এবং সুস্থ রাখতে খেতে পারেন ডাল,সবুজ শাকসবজি, বাদাম,ফাইবার খান।এগুলো আপনার লিভারকে অনেক সুস্থ রাখবে।
৮) টক্সিন।
ত্বকে বিষ প্রক্রিয়া লিভারের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। ত্বকের মাধ্যমে বিষ রক্তে শোষিত হয়।তাই আপনি সবসময় নিজেকে দূরে রাখেন স্প্রে,টক্সিন থেকে।
৯) হেলদি ফ্যাট।
আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হচ্ছে ফ্যাট।তাই লিভার সুস্থ রাখার জন্য ফ্যাট ডায়েট থেকে একেবারে বাদ দেবেন না। তাই আপনি খান হেলদি ফ্যাট।অলিভ, ওয়ালনাট জাতীয় খাবার গুলোতে হেলদি ফ্যাট থাকে।লিভার ভালো ও সুস্থ রাখতে রাখতে আপনি খেতে পারেন হেলদি ফ্যাট খাবার।
১০) ইজি বুজিং।
যারা অ্যালকোহল বেশি পরিমাণ মদ্যপান করেন তাদের লিভার জমা হয় টক্সিন।যার ফলে অতিরিক্ত মদ্যপান লিভারকে ক্ষতি করে। তবে হালকা পরিমানে অ্যালকোহল শরীরের জন্য ভালো। আপনি বেশি পরিমাণ মদ্যপান করবেন না। এটি কিন্তু আপনার লিভারকে ক্ষতি করবে।
কি ফল খেলে লিভার ভালো থাকে
১) হলুদ।
হলুদের মাঝে আছেন কারকিউমিন।বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। আর এই হলুদে থাকা উপাদানটি লিভারে জমা দূষিত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।
২) যে কোন কপি।
লিভার জমে থাকা টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে যেকোনো কপি।বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি,কিংবা ব্রকোলি এই সবজিগুলোতে রয়েছে গ্লুকোসিনোলেটস নামক একটি উপাদান। আর এই উপাদানটি লিভারে জমে থাকা টক্সিন দূর করতে অনেক বেশি সহায়তা করে।
৩) সাইট্রাস ফল।
লিভারের যত্ন করতে আপনি খেতে পারেন সাইট্রাস ফল।কমলালেবু, মুসাম্বি,বাতাবি বা সাধারণ লেবুও লিভারের যত্নে খাওয়া যায়। বিশেষ করে এই ধরনের ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এর উৎসব রয়েছে। আরো রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও হয়েছে বেশি পরিমাণে।
৪) ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এই খাবার গুলো লিভারকে ভালো রাখতে অনেক বেশি সাহায্য করে। তাই বিভিন্ন রকমের বাদাম, বীজ,সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার গণেরা। এটি লিভার ভালো রাখে এবং হার্টকেও ভালো রাখে।তাই খেতে পারেন ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড খাবার।
৫) গ্রিন টি।
এই গ্রিন টি এমন একটি উপাদান। এই উপাদানটি লিভার খুব ভালো রাখে এবং শরীরের আরো অঙ্গ পতঙ্গ কে ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে। গ্রিন টি এর মধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে যথেষ্ট পরিমাণে। গ্রিন টি আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
লিভার রোগীর খাদ্য তালিকা
১) ওটস।
খাবার হজম সাহায্য করতে বেশি উপকারী হচ্ছে ওটস।এই ওটসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবারের উৎসব। যে খাবারগুলো হজম ভালো করে সে খাবারগুলো লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী খাবার। লিভার রোগীর খাদ্য তালিকা এই খাবারটি রাখা অত্যন্ত জরুরী।
২) কফি
কফি খাওয়ার অনেকের অভ্যাস হয়েছে। কফি খাওয়ার কিন্তু অনেক সুফল রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন নিয়মিত কফি খেলে লিভারের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্তত ১৪ শতাংশ কমে যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই কফি খেতে হবে দুধ ও চিনি ছাড়া। আপনি যদি পরিমাণ মতো কফি খান এই আপনাকে লিভারের সমস্যা থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে। তাই যাদের লিভার হয়েছে তারা কফি খেতে পারেন। বেশি পরিমাণে নয় নিয়মমাফিক পরিমাণে খাবেন।
৩) মাছ।
যে মাছগুলোতে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে সে মাছগুলো লিভারের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এক্ষেত্রে আপনি আপনার খাদ্য তালিকা রাখতে পারেন স্যামন ফিশ।এই স্যামন ফিশ খেলে আপনি অনেক উপকার পাবেন।এই ছাড়াও রাখতে পারেন ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত অন্যান্য মাছ।
৪) অলিভ অয়েল।
আপনি যদি আপনার খাবারের তালিকায় অলিভ অয়েল রাখেন তাহলে আপনি অনেক বেশি উপকার পাবেন। এই তেলের মধ্যে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে ভালো রাখে লিভারের কার্যকারিতা। আপনি যদি নিয়ামিত অলিভ অয়েল খান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার লিভার অনেক বেশি সুস্থ থাকবে।
৫) ব্রকোলি।
সবুজ রঙ্গের এই সবজিটির মাঝে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।ব্রকোলিতে থাকা উপাদানটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। যারা এই সবজিটি নিয়মিত খান তাদের লিভার সুস্থ থাকবে। তাই সবজিটি লিভার রোগীর খাদ্য তালিকা এরমধ্যে রাখতে পারেন।
৬) বাদাম।
আমাদের মাঝে অনেকে রয়েছে যাদের খিদা লাগে তারা বাদাম খায়। তাই বেশি বেশি বাদাম খাবেন না।কারণ কোন খাবার বেশি পরিমাণে খেলেন তখন আমরা সে খাবারের যে উপাদান রয়েছে সেটি আমরা পাইনা। তাই আপনি প্রতিদিন সব ধরনের বাদাম থেকে অল্প অল্প পরিমানে খেতে পারেন। এতে করে শরীরের অনেক বেশি উপকার মিলবে। এগুলোতে রয়েছে ভিটামিন ই,ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।বিশেষ করে বাদামে থাকা এই উপাদানগুলো লিভারকে সুস্থ রাখতে অনেক বেশি সহয়তা দিয়ে থাকেন।বাদাম শরীর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো।
৭) গ্রিন টি।
আপনি চাইলে প্রতিদিন এক কাপ পরিমাণে গ্রিন টি খেতে পারেন।গ্রিন টি থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। শরীরের জন্য থাকা দূষিত পদার্থগুলো বের করতে অনেক বেশি সহায়তা করে গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদানটি।এটি আমাদের লিভার কে ভালো এবং সুস্থ রাখে। দিনে এক কাপ এর বেশি খাবেন না। তাহলে এটি আপনার জন্য অনেক বেশি উপকারের হবে।গ্রিন-টি অনেক উপকারী।
আমাদের শেষ কথা। এই ছিল আমাদের আজকের লিভার ভালো রাখার উপায় আর্টিকেল। আশা করছি আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা সঠিক তথ্য পেয়ে গেছেন। কোথায় ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আল্লাহ হাফেজ সবাই ভাল থাকবেন।