থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

হাই,আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয়টি হচ্ছে থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা সবাই জানতে পারবেন থানকুনি পাতার উপকারিতা কি কি।

থানকুনি পাতার ছবি

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা


আমাদের মাঝে অনেকে রয়েছে থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জানে না। অনেকে রয়েছে থানকুনি পাতা চিনেন না। থানকুনি পাতাতে নানা রকমের ঔষুধি গুনাগুন রয়েছে।

থানকুনি উপকারিতা কি কি

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। থানকুনি পাতা বাড়ির আশেপাশে জমিগুলোতে দেখা যায়। অনেকে থানকুনি পাতা খেতে চায় না। আজকের এই আর্টিকেল যদি পড়ে এবং থানকুনি পাতার সম্পর্কে জানতে পারে তাহলে সে ব্যক্তিকেও খাবে থানকুনি পাতা। 

থানকুনি পাতার উপকারিতা

১) ত্বকের ক্ষত সারাতে। 

যখন আপনার শরীরের কোন অংশ কেটে যাবে সে মুহূর্তে কাটা অংশে রক্ত থামানোর জন্য থানকুনি পাতা ব্যবহার করতে পারবেন। ক্ষতস্থানে যদি থানকুনি পাতা বেটে লাগিয়ে দিলে ক্ষতস্থানের ব্যথা  উপশমের পাশাপাশি ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। ত্বকের ক্ষত সারাতে থানকুনি পাতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 

২) শরীরের জ্বালাপোড়া দূর করুন। 

থানকুনি পাতা শরীরের জ্বালাপোড়া দূর করতে অনেক বেশি সহায়তা করেন।থানকুনি পাতা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং শরীরের ভিতর থেকে ঠান্ডা ও প্রশান্ত করে। আর ঠিক তখনই ত্বকে সতেজভাব ফুটে ওঠে।যাদের শরীরে জ্বালাপোড়ার ভাব রয়েছে তারা খেতে পারেন থানকুনি পাতা। এতে করে আপনার শরীরের জ্বালাপোড়া অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

৩) শরীরের রক্ত প্রবাহ ঠিক রাখে। 

বিশেষ করে আমাদের মাঝে অনেকের থ্রম্বোসিসের সমস্যা থাকেন। এছাড়াও অনেকের দেহে অন্য শারীরিক সমস্যার কারণে রক্ত প্রবাহের সমস্যা দেখা দেয়। আপনার শরীরের রক্ত বিশুদ্ধ রাখতে খেতে পারেন থানকুনি পাতার রস। ফলে শরীরের প্রতি কোষে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছায়। থানকুনি পাতা শরীরের নানারকমের জটিলতা দূর করতে অনেক বেশি সহায়তা করেন। 

থানকুনি পাতা কোন রোগ সারাতে পারে?

৪) আলসার দূর করে। 

আমাদের পেটে নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয় মাঝে মাঝে। পেটের যেকোনো ধরনের রোগ দূর করতে থানকুনি পাতা অত্যন্ত কার্যকারী। এই থানকুনি পাতা দূর করতে পারে আমাশয় এবং আলসার মত রোগ।হজম সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনি খেতে পারেন থানকুনি পাতা। এটি খুব সহজে আপনার হজম সমস্যা দূর করে দেবে। 

৫) মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি। 

থানকুনি পাতা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অনেক বেশি সহায়তা করেন। নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং পেন্টাসাক্লিক ট্রিটারপেনস নামের একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে।যার ফলে মস্তিষ্ক পরিপূর্ণভাবে কাজ করে। স্মৃতি শক্তির উন্নতির সঙ্গে বুদ্ধির দারও বেড়ে যায়। তাই আপনি যদি চান মস্তিষ্কের উন্নতি তাহলে আপনি খেতে পারেন থানকুনি পাতা। থানকুনি পাতা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য অনেক বেশি সাহায্য করেন। 

৬) দূর করে মানসিক অবসাদ।

অনেকে মানসিক অবসাদ ভোগে থাকেন।মানসিক অবসাদ দূর করার জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকারী হচ্ছে থানকুনি পাতা। থানকুনি পাতা মানসিক অবসাদ দূর করেন।থানকুনি পাতা আপনাকে অবশ্যই রস বের করে রস খেতে হবে। থানকুনি পাতা আমাদের স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মানসিক চাপ এবং অস্থিরতা কমে যায়।ফলে অ্যাংজাইটির আশঙ্কা ও কমে যায়। 

থানকুনি পাতা খেলে কি ঘুম হয়?

৭) ভালো হয় ঘুম। 

অনেকের ঘুম হয় না এরকম সমস্যা রয়েছে। কারো যদি এমন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনারা খেতে পারেন থানকুনি পাতা বেজানো পানি।এতে করে আপনার ঘুম অনেক বেশি আরামের হবে। ঘুম না আসার সমস্যা দূর করতে থানকুনি পাতা বেশ কার্যকর। 

৮) ত্বকের সতেজতায়।

থানকুনি পাতাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং উচ্চ মানের অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। থানকুনি পাতা ব্ররণ দূর করতে পারে।থানকুনি পাতা নির্যাস সমৃদ্ধ সৌন্দর্যপূণ্য ক্লান্ত ভাব দূর করে আমাদের ত্বককে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে অনেক বেশি সহায়তা করেন থানকুনি পাতা। 

৯) ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ।

থানকুনি পাতাতে রয়েছে বেশি পরিমাণ ফ্ল্যাভোনয়েড এবং সক্রিয় উপাদান ম্যাডেকাসসাইড অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কাজ করে। এটি ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। ত্বকের বলিরেখা দূর করে।আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য থানকুনি পাতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

১০) ত্বকের কোমলতা ও আদ্রতা। 

থানকুনি পাতাতে রয়েছে, অ্যামাইনো অ্যাসিড,বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইটোক্যামিকেল ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জুগিয়ে ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করেন। এতে করে শরীরের ত্বক থাকে কোমল এবং ত্বক থেকে বয়সের ছাপ কমায়।ত্বকের কোমলতা ও আদ্রতার জন্য থানকুনি থাকা উপাদানগুলো বেশ কার্যকারী। 

থানকুনি পাতার রস চুলে দিলে কি হয়?

১১) চুল পড়া বন্ধ। 

থানকুনি পাতা চুল পড়া বন্ধ করতে পারে।থানকুনি পাতাতে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি। আর এই উপাদানটি মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং  চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। থানকুনি পাতা মাথার চুল পড়া রোধ করতে পারে। তাই যাদের চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে তারা থানকুনি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। পাতা থেকে রস বের করে তারপর মাথায় লাগাবেন। এটি আপনার চুল গজাবে এবং চুল পড়া বন্ধ করবে। 

১২) লিভার ও পেট ভালো রাখে। 

থানকুনি পাতা পেটের নানা রকমের সমস্যা দূর করতে পারে এবং লিভারকে ও ভালো রাখতে পারে। আপনি যদি নিয়মিত এবং পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা খান তাহলে এটি পেট এবং লিভার দুটি ভাল রাখবে।

১৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন থানকুনি পাতা। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নতি করতে আপনি খেতে পারেন থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে। এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এই পদ্ধতিতে শিশুকে খাওয়ানো উপকারী। 

১৪) দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্য। 

যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে এটি দূর করতে আপনি খেতে পারেন থানকুনি পাতার ও রস। আপনি যদি আপনার খাদ্য তালিকায় থানকুনি পাতা রাখেন তাহলে খুব সহজে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য থাকা রোগটি খুব সহজে দূর হয়ে যাবে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য থানকুনি পাতা বেশ কার্যকরী। 

১৫) কাশি এবং শ্বাসযন্ত্র। 

কাশি এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দূর করতে আপনি খেতে পারেন থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে। এটি কাশি এবং শ্বাসযন্ত্রের অন্যান অসুখ সরাতে এটি বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন। আপনার গলা ব্যথা এবং কাশির সমস্যা দূর করতে থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে একটু চিনি মিশিয়ে খেলে এটিতে আপনি অনেক ভালো উপকার পাবেন। এটা আপনি খেতে পারেন এক সপ্তাহ ধরে। তাহলে অনেক ভালো কার্যকারী উপকার পাবেন। 

১৬) মুক্তি দেয় আর্থইটিস।

বিশেষ করে যাদের আর্থইটিস বা বাতের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য বেশ কার্যকরী হলো থানকুনি পাতা। এটি প্রদাহ  দূর করতে সাহায্য করে। যারা বাতের সমস্যায় ভুগছেন তারা অবশ্যই প্রতিদিন দুটি থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে বাতের ব্যাথা অতি দ্রুত ভালো হয়ে যাবে। আর এতে করে আপনি খুব সহজে মুক্তি পেয়ে যাবেন বাতের ব্যথা থেকে। 

থানকুনি পাতার অউপকারিতা 

আমরা অনেকে জানি আবার অনেকে জানি না। প্রতিটি জিনিসের ভালো এবং খারাপ উভয় দিক রয়েছে। ঠিক তেমনি করে থানকুনি পাতার অউপকারিতা ও রয়েছে। নিচে কিছু থানকুনি পাতার অউপকারিতা দেওয়া হল। 

থানকুনি পাতা বেশি খেলে কি ক্ষতি হয়?

১) থানকুনি পাতা যেমন আমাদের পেটের নানা রকমের সমস্যা দূর করতে পারে ঠিক তেমনি থানকুনি পাতা বেশি খেলে আমাদের পেটের ব্যথা ও বেড়ে যেতে পারে। তাই থানকুনি পাতা বেশি খাবেন না। এটি আপনি পরিমাণ মতো খাবেন। তাহলে কোন সমস্যা হবে না আপনার। 

২) থানকুনি পাতা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ খেয়ে ফেললে মাথা ঘোরা সব নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে আপনার মাঝে। 

৩) বিশেষ করে যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা কখনো থানকুনি পাতা খাবেন না। যদি আপনি খান তাহলে আপনি নানা রকমের সমস্যা করতে পারেন। তাই যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা থানকুনি পাতা কোনভাবে খাবেন না। 

৪) যাদের অপারেশন হয়েছে এমন রোগীদের থানকুনি পাতা না খাওয়া টাই ভালো হবে।

৬) বেশি পরিমাণে থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে হতে পারে অ্যালার্জি, খোশ-চাপড়াও  হতে পারে।তাই যে কোন জিনিস প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে খাবেন না। 

থানকুনি পাতা কিভাবে খেতে হয়?

আপনি চাইলে থানকুনি পাতা অনেক ভাবে খেতে পারবেন। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধের সাথে তিন চার চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেতে পারেন। এভাবে খেলে আপনার চেহারার লাবণ্য আসবে।সকালে খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেলে যেমন উপকার পাওয়া যায় ঠিক সমান উপকার পাওয়া যাবে থানকুনি পাতা পাতা চিবিয়ে খেলে। আপনি চাইলে আবার থানকুনি পাতা খেতে পারেন পেস্ট বানিয়ে।আপনি চাইলে এসব পদ্ধতিতে খেতে পারেন থানকুনি পাতা। আবার থানকুনি পাতার রস আপনি মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারবেন। 

আমাদের শেষ কথা। ছিল আমাদের আজকের আয়োজন। আশা করছি আজকের এই আয়োজন থেকে আপনারা সবাই অতি সহজে জানতে পারছেন থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা। থানকুনি পাতা আসলেই আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী এবং এটিতে ওষুধী নানা রকমের গুনাগুন রয়েছে। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url